ওয়েবসাইট বানানোর জন্য হোস্টিং কোথায় কিনবেন মাথায় আসলেই প্রশ্ন জাগে কোন হোস্টিং ভাল? বিদেশী নাকি দেশি?
সবসময় মনে রাখবেন ইন্টারনেটের প্রত্যেকটি ওয়েবসাইট কোন না কোন দেশের সার্ভারে অবস্থিত। হতে পারে কেউ বা কোন প্রতিষ্ঠান তাদের পার্সোনাল কম্পিউটাকে সার্ভার হিসেবে ব্যবহার করে তাদের ওয়েবসাইট হোস্ট করছে (যদিও এভাবে পারফামেন্স ভাল পাওয়া যায়না) কিংবা কোন প্রফেশনাল সার্ভার ব্যবহার করছে।
যেটাই হোক, ওয়েবসাইটটি অবশ্যই কোন দেশের কোন একটি পারসোনাল কম্পিউটার বা সার্ভারে অবস্থান করছে এবং সেখান থেকে সবাই ওয়েবসাইটির তথ্য দেখতে পাচ্ছে।
কিন্তু বাংলাদেশে বা অন্য দেশে ওয়েবসাইট হোস্টিং এর মধ্যে পার্থক্য কি?
আসলে, বাংলাদেশ বা বিদেশের হোস্টিং এর মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে লেটেন্সি বা ওয়েবসাইট লোডিং টাইম। লেটেন্সি মানে হচ্ছে রেসপন্স টাইম অর্থাৎ একটা ওয়েবসাইটে ঢোকার জন্য এড্রেস টাইপ করে এন্টার দেয়ার পর সাইটটা লোড না হওয়া পর্যন্ত যে সময়টা লাগে সেটাই হল লেটেন্সি। আপনি একটা ওয়েবসাইটে ঢুকে কোন একটা তথ্য যখন পেতে চান তখন সেই ওয়েবসাইট তার সার্ভার থেকে ওই তথ্যটি এনে আপনাকে দেখায়। অর্থাৎ আপনি তথ্য চাওয়ার পর ওয়েবসাইট সার্ভার থেকে তথ্য আপনাকে ফেরৎ দেয়া পর্যন্ত যে সময়টা লাগে সেটাই হল লেটেন্সি।
ইন্টারনেট মানে হল পুরো বিশ্বের কম্পিউটারগুলির একটা নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ প্রত্যেকটি দেশের প্রত্যেকটি কম্পিউটার বা সার্ভার একে অপরের সাথে যুক্ত। এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান থেকে যে সার্ভার যত দূরে, তার রেসপন্স টাইম বা লেটেন্সি তত বেশী। সংক্ষিপ্ত ভাবে যদি বলি তাহলে; অন্য দেশের সার্ভারে হোস্ট করা ওয়েবসাইট বা সিস্টেমের লেটেন্সি বেশী হবে। উদাহরণসরূপঃ আমাদের দেশীয় সার্ভারে হোস্ট করা আছে (অবশ্যই বাংলাদেশী আইপি ব্যবহার করে এমন সার্ভার অর্থাৎ BDIX কানেক্টেড সার্ভার) এমন ওয়েবসাইটে ঢুকতে আমাদের ১ থেকে ১০ মিলিসেকেন্ড সময় লাগবে মাত্র, সেটা দেশের যে কোন প্রন্তেই হোক।
কিন্তু একটা ওয়েবসাইট যদি আমেরিকা বা ইউরোপের কোন সার্ভারে হোস্ট করা থাকে তাহলে ওয়েবসাইটিতে ঢুকতে আমাদের সর্বনিম্ন ৫০-৬০ মিলিসেকেন্ড (যদি খুব ভাল, দামী কিংবা ক্লাউড সার্ভার হয়) লাগবে, যদি ইন্ডিয়া বা সিংগাপুরের সাধারণ কোন সার্ভার হয় তাহলে সর্বনিম্ন ১১০ মিলিসেকেন্ড লাগবে আর যদি আমেরিকা, ইউরোপ কিংবা চায়নিজ কোন সাধারণ হোস্টিং হয় তাহলে ১৮০ মিলিসেকেন্ড থেকে শুরু করে ৪৫০ বা তারও বেশী হতে পারে। আপনার নেট কানেকশন থেকে কোন দেশের সার্ভারের কত লেটেন্সি দেখতে পারেন এই ওয়েবসাইট থেকে।
যেকোন ওয়েবসাইটের জন্যই লেটেন্সি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে SEO (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) তে ভাল র্যাংক পাওয়ার জন্য। আপনার ওয়েবসাইট যত স্লো হবে SEO তে আপনার র্যাংক ততই কম পাবেন। যেমন গুগল যদি বুঝতে পারে আপনার ওয়েবসাইট স্লো তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের র্যাংক কমিয়ে দিয়ে যে ওয়েবসাইটগুলি দ্রুত লোড হয় সেগুলিকে প্রথমে দেখাবে।
এই লোডিং স্পীড/রেসপন্স টাইম বা লেটেন্সি যাই বলেন না কেন, এটাই প্রধান কারণ দেশীয় সার্ভার ব্যবহার করা। এটি ছাড়াও আরো বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমনঃ
বাংলাদেশী সার্ভার বা হোস্টিং ব্যবহার করার কারণ
সাপোর্ট
হোস্টিং এর ক্ষেত্রে সাপোর্টটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। হঠাৎ করে আপনার ওয়েবসাইটের সার্ভারজনিত কোন সমস্যা হলে অবশ্যই আপনাকে খুব দ্রুত সাপোর্টের সরনাপন্ন হতে হবে। বিদেশী কোন হোস্টিং হলে আমাদের জন্য মূল যে সমস্যাটা হবে তা হল ভাষা। বিদেশী হোস্টিং মানেই আপনাকে ইংরেজিতে কথা বলে তাদেরকে সমস্যা জানাতে হবে এবং সমাধান করতে হবে। আবার বিদেশী হোস্টিং হলে ওদের দেশের সাপোর্ট টাইম কখন কখন (যদি ২৪ ঘণ্টাই সাপোর্ট না থাকে) তার জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।
মেইনটেন্যান্স টাইম / রক্ষণাবেক্ষণের সময়ঃ
আপনি যেখান থেকেই হোস্টিং নেন না কেন তাদের অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় পর পর সার্ভারের ক্রুটি কিংবা আপডেট আছে কিনা এসব চেক করে ঠিক করতে হয়। কোয়ালিটি মেইনটেইন করার জন্য এটি প্রত্যেক হোস্টিং কোম্পানীকেই করতে হয়। তবে সাধারণত এই কাজটি করা হয় রাতে, যাখন সাইটের ভিজিটর খুব কম থাকে যাতে সার্ভার কিছু সময়ের জন্য বন্ধ বা স্লো থাকলেও সমস্যা না হয়। যদি বাংলাদেশী কোন হোস্টিং সার্ভার ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে আপনি এই বিষয়টি টেরই পাবেন না কিন্তু বিদেশী হোস্টিং হলে ওদের টাইম জোনের সাথে আমাদের টাইম জোন মিলবে না সেক্ষেত্রে ওদের দেশে রাত হলে আমাদের দেশে দিনও হতে পারে। আর দিনের বেলা সার্ভার মেইনটেন্যান্স এর জন্য ওয়েবসাইট স্লো বা বন্ধ হলে আপনার ব্যবসার ক্ষতি অনিবার্য।
কাস্টমার
আপনার ওয়েবসাইটের মূল ব্যবহারকারী বা ভিজিটর কারা হবে? আপনার ব্যবসা বা সার্ভিস কি প্রধানত বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য নাকি বিদেশীদের জন্য? এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। যদি আপনার ব্যবসা বা সার্ভিস বাংলাদেশ নির্ভর হয় তাহলে আপনি কেন বাইরের দেশের সার্ভারে আপনার ওয়েবসাইট হোস্ট করবেন আর অযথা আপনার ওয়েবসাইট স্লো করবেন বাংলাদেশীদের জন্য?
পেমেন্ট ও অন্যান্য খরচ
দেশী বা বিদেশী সার্ভার/হোস্টিং কেনার ক্ষেত্রে সহজে পেমেন্ট করাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন ধরুন বাইরের কোন হোস্টিং কিনলে আপনার ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক। অনেকের এই কার্ড থাকলেও এটার মেইনটেন্যান্স কিংবা ট্রানজেকশন ফি থাকতে পারে। যা অতিরিক্ত একটি খরচ।
অন্যদিকে বাংলাদেশী কোন হোস্টিং হলে আপনি মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, রকেট, নগদ), ব্যাংক, দেশীয় ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড দিয়ে খুব সহজেই পেমেন্ট করতে পারবেন।
আইনগত সুরক্ষা
যখন কোন কোম্পানী থেকে হোস্টিং কিনবেন তখন অবশ্যই আপনাকে তার সার্ভিসের উপর নির্ভর হতে হবে। এমন অনেক হোস্টিং কোম্পানী আছে যারা আপনাকে ভাল ভাল অফার দেখিয়ে পরে বাজে সার্ভিস দিতে পারে। যেমন ধরুন ওই কোম্পানীর মেইনটেন্যান্স গাফিলতির কারণে সাইট হ্যাক হওয়া বা আপনার সাইটের অটো ব্যাকআপ না রাখা এসব। এক্ষেত্রে বিদেশী হোস্টিং হলে ক্ষতিপূরণ বা আইনী লড়াইয়ের জন্য ওই দেশের কোর্টের সহযোগীতা লাগবে। যেটা অনেকের জন্য সম্ভব হবে না এবং ব্যায়বহুলও হতে পারে।
অন্যদিকে বাংলাদেশী হোস্টিং কোম্পানী হলে, যদি কখনো এরকম কোন সমস্যার মুখোমুখি হন তাহলে আপনি খুব সহজেই আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
শেষকথা হল, হোস্টিং আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী যেখান থেকেই কিনেন না কেন, উপরের কথাগুলি সবসময় বিবেচনায় রাখবেন। তাহলে পরে হয়ত কোন বিষয় নিয়ে আফসোস করতে হবে না।
দেশীয় ভাল হোস্টিং কোম্পানীর তালিকা (শুধুমাত্র যাদের সার্ভার BDIX সংযুক্ত)
নিচের এই তালিকায় উল্লেখিত হোস্টিং কোম্পানীগুলি আমার জানামতে ভাল। তবে এর বাইরেও অনেক ভাল ভাল কোম্পানী থাকতে পাবে আবার এই লিষ্টের মধ্যে উল্লেখিত হোস্টিং কোম্পানীগুলি থেকে অনেকের বাজে অভিজ্ঞতাও থাকতে পারে।
১) জিয়নবিডি.কম
XeonBD হল দেশীয় সার্ভারের বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় কোম্পানী। আমার জনামতে জিয়নবিডিই সর্বপ্রথম কোম্পানী যারা বাংলাদেশী ডাটাসেন্টার চালু করেছে এবং তাদের বাংলাদেশী সব সার্ভারে BDIX কানেকশন রয়েছে। যার ফলে এখান থেকে হোস্টিং সার্ভার কিনলে বাংলাদেশের ভিজিটরদের জন্য খুব দ্রুত ওয়েবসাইট লোড হবে।
BDIX কানেক্টেট বাংলাদেশী সার্ভার ব্যবহার করে এমন কয়েকটি সাইট হলঃ
– প্রযুক্তিটিম
– নগরস্টোর.কম
– পূবালী ব্যাংক লিমিটেড
– শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক
টেস্টিং এর জন্য উপরের সাইটগুলি থেকে ঘুরে আসতে পারেন। তাহলে বুঝতে পারবেন বাংলাদেশী সার্ভার ব্যবহার করার কারণে কত দ্রুত লোড হচ্ছে এই সাইটগুলি।
জিয়নবিডির সবচেয়ে ভাল দিক হল মাসিক সর্বনিম্ন ৩৫০ টাকার প্যাকেজও রয়েছে। এক্ষেত্রে যারা BDIX হোস্টিং টেস্ট করতে চান কিংবা যাদের অল্প টাকায় ভাল সার্ভার দরকার তাদের জন্য দারুন সুবিধা।
বিস্তারিত জানতে জিওনবিডির ওয়েবসাইট ঘুরে আসতে পারেন।
২) বাংলাদেশ অনলাইন
বাংলাদেশ অনলাইন (BOL) বেক্সিমকো গ্রুপের একটি কোম্পানী। এরা মূলত কর্পোরেট লেভেলে বাংলাদেশী হোস্টিং এর সুবিধা দিয়ে থাকে। ওয়েবসাইট।
এদের হোস্টিং ব্যবহার করে এমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সাইট হলঃ
– ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ
– ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ
– ঢাকা ডায়নামাইটস
৩) Exonhost
আমার জানামতে অনেক রেপুটেড হোস্টিং কোম্পানী। ফেইসবুকে যদি পোস্ট করেন কোন হোস্টিং ভাল তাহলে এদের নামটিই বেশীবার দেখা যায় বিভিন্ন ব্যাক্তির কমেন্টে।
এখান থেকে হোস্টিং অর্ডার করার সময় অবশ্যই বাংলাদেশ হিসেবে হোস্টিং লোকেশন সিলেক্ট করতে হবে তাহলেই মিলবে BDIX সুবিধাসহ বাংলাদেশী হোস্টিং সুবিধা।
ওয়েবসাইট
৪) হোস্টমাইট
আমার ব্যাক্তিগত ওয়েবসাইট হোস্টমাইট থেকেই হোস্ট করা। সেই ২০১১ সাল থেকে ব্যবহার করছি। বেশ ভালই সাপোর্ট পেয়েছি। সম্প্রতি এরাও BDIX হোস্টিং চালু করেছে।
ওয়েবসাইট
৫) ডায়ানাহোস্ট
৬) টসহোস্ট
৭) টমাটোস
৮) হোস্টসেবা
৯) আলফা নেট
১০) বিডিওয়েবস
আপনার জানামতে আরো অন্য কোন ভাল BDIX হোস্টিং কোম্পানী থাকলে কমেন্টে আমাকে জানালে আমি লিংক অ্যাড করে দিব।
বাংলাদেশী অন্যান্য ভাল হোস্টিং কোম্পানীর তালিকা (যাদের বাংলাদেশী সার্ভার নেই বা থাকলেও আমার জানা নেই)
বাংলাদেশে অনেক অনেক ভাল ও বিশ্বমানের হোস্টিং কোম্পানী রয়েছে। নিচে Bangladesh Domain Hosting Providers Association (BDHPA) এর সদস্য এমন সকল হোস্টিং কোম্পানীর নাম ও ওয়েবসাইট লিংক পাওয়া যাবে এখানে।
.
.
এই লেখাটি Milesweb এর একটি আর্টিকেল অনুসরণ করে লেখা।
আমাদের বাংলাদেশ কোন কিছুতেই আজকাল পিছিয়ে নেই। দেশে এত হোস্টিং কোম্পানী থাকতে আমরা কেন বিদেশী হোস্টিং নিতে যাবো? আমরা শুধু মনে করি যে বিদেশী জিনিস কোয়ালিটি দিক থেকে অনেক ভাল কিন্তু আমাদের দেশ আজকাল টেকনোলোজি এবং সব কিছুতেই এগোচ্ছে আর আমাদের মত নাগরিকরাই যদি দেশকে সাপোর্ট না করি তবে এই উন্নতির সময় আরো বেশী লেগে যাবে।